মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের সর্বশেষ খবর
আজকে ৭ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল ঘোষণা পাওয়া না গেলেও প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ২৭০টি ইলেকটোরাল ভোট পেতে হয়। সেই হিসেবে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ২৭০টির বেশি ইলেকটোরাল ভোট পেয়েছেন বিধায় ডোনাল ট্রাম্পের বিজয় নিশ্চিত হয়েছে। ডোনাল ট্রাম্প তার প্রতিদ্বন্দ্বী কমলা হ্যারিসের চাইতে পপুলার ভোটও পেয়েছেন প্রায় ৪৭ লাখের বেশি।
ইলেকটোরাল কলেজ ভোট
৭ নভেম্বর বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা ৪০ মিনিট সময় পর্যন্ত প্রাপ্ত ফলাফলে দেখা যায় মোট ৪৭টি অঙ্গরাজ্য ও রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি’রসহ ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। আমেরিকার মোট ৫০টি রাজ্যের মধ্যে অ্যারিজোনা, নেভাদা ও মেইন অঙ্গরাজ্যের ভোট এখনো গণনা বাকী রয়েছে।
প্রাপ্ত ৪৭টি অঙ্গ রাজ্যের ফলাফলে দেখা যায়,ডোনাল ট্রাম্প মোট ২৯৪টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কামালা হ্যারিস পেয়েছেন ২২৩টি ভোট।
পপুলার ভোট
এখন পর্যন্ত গণনা হওয়া পপুলার (জনপ্রিয়) মোট ভোটের ৫১.৮ শতাংশ পেয়েছেন ডোনাল ট্রাম্প। তার প্রাপ্ত ভোটের পরিমাণ ৭ কোটি ২৩ লাখ। প্রতিদ্বন্দ্বী কামালা হ্যারিস পেয়েছেন ৬ কোটি ৭৬ লাখ যা শতাংশের হিসেবে হয় ৪৭. ৫ শতাংশ। পপুলার ভোটে মানে ভোটারদের প্রত্যক্ষ ভোটে ট্রাম্পের সাথে হ্যারিসের ভোটের ব্যবধান প্রায় ৪৭ লাখের বেশি।
আমেরিকার নির্বাচন পদ্ধতি
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দুই কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফেডারেল, রাজ্য এবং স্থানীয় পর্যায়ে একসাথে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ফেডারেল স্তরের পদ্ধতি হলো দেশের প্রেডিডেন্ট একটি ইলেক্টোরাল কলেজের মাধ্যমে প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের জনগণের পরোক্ষ ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে থাকেন। ফেডারেল আইনসভার সকল সদস্যবৃন্দ, কংগ্রেস এবং প্রত্যেকটি রাজ্যের জনগণের ভোটের মাধ্যমে সরাসরি নির্বাচিত অনুষ্ঠিত হয়।
দেশটির নির্বাচনী ব্যবস্থা জটিল রকমের বিকেন্দ্রীকৃত। মার্কিন রাষ্ট্রীয় সংবিধান ফেডারেল কর্মকর্তাদের নির্বাচনের জন্য প্যারামিটার নির্ধারণ করে থাকলেও রাজ্যের আইন কিন্তু ফেডারেল আইনের আওতাভূক্ত নয়। ফেডারেল, রাজ্য এবং স্থানীয় – পৃথক পৃথক ভাবে রাজ্যের মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে থাকে। আর টোটাল নির্বাচনী প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করে থাকে কাউন্টি বা স্থানীয় পর্যায়ে অর্পিত সংস্থা।
আমেরিকার জনসংখ্যা কত
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মোট আয়তন ৯৮.৩ লক্ষ বর্গকিলোমিটার যা মাইলে হিসেব কলে প্রায় ৩৭.৯ লক্ষ বর্গমাইল। এই দেশটির জনসংখ্যা প্রায় ৩২ কোটি ৮২ লক্ষের বেশি। পৃথিবীর মধ্যে সামগ্রিক আয়তনের হিসেব অনুযায়ী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম দেশ।
ডোনাল্ড ট্রাম্প কবে শপথ গ্রহণ করবেন
ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামী বছর ২০২৫ সালের ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে দ্বিতীয় বারের মতো শপথ গ্রহণ করবেন। উল্লেখ্য যে, ২০১৬ সালে ইলেকটোরাল কলেজ ভোটে ডোনাল ট্রাম্প জয় পেয়েছিলেন কিন্তু পপুলার ভোটে হেরেছিলেন।
এবার নির্বাচনে ইলেকটোরাল কলেজ ভোট এবং পপুলার ভোট উভয় ক্ষেত্রেই জয়লাভ করেছেন ডোনাল ট্রাম্প। এদিকে প্রেসিডেন্ট পদে জয়ী হওয়ার কারণে ডোনাল ট্রাম্পকে তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কামালা হ্যারিস ফোন করে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোয় ট্রাম্পের জয়জয়কার
আমেরিকার নির্বাচনে বরাবরই সাতটি দোদুল্যমান রাজ্য (সুইং স্টেট) এর ওপর নির্বাচনের ফলাফল অনেকটাই নির্ভর করে। এর মধ্যে জর্জিয়া, মিশিগান, পেলসিলভেনিয়া, নর্থ ক্যারোলিনা, উইসকনসিন অঙ্গ রাজ্যে বিপুল জয় পেয়েছেন ডোনাল ট্রাম্প। বাকি রাজ্যগুলিতেও ট্রাম্প এগিয়ে আছেন তিনি।
সিনেট আবার রিপাবলিকানদের দখলে
মার্কিন পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটে পুনরায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে রিপাবলিকান পার্টি মানে ডোনাল ট্রাম্পের দল। গত নির্বাচনের ফলাফল অনুযায়ী উচ্চকক্ষে ১০০ আসনের মধ্যে ৫১ এবং ৪৯ ব্যবধানে সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিলো ডেমোক্র্যাট পার্টি। বর্তমান ২০২৪ এর নির্বাচনে সিনেটে ৫২ এবং ৪৪ ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছে রিপাবলিকান পার্টি।
হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভ
হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভে সংখ্যাগরিষ্ঠতার পথে হাঁটছে রিপাবলিকান প্রার্থীরা। ৪৩৫ সদস্যের নিম্নকক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য পেতে হবে মোট ২১৮ টি সদস্য পদ। আজকে ৭ নভেম্বর-২৪ সকাল পর্যন্ত ২০৫ আসনে জয় নিশ্চিত করেছে রিপাবলিকানরা। অপর দিকে ডেমোক্র্যাট প্রার্থীদের দখলে আছে মোট ১৮৯টি আসন।
হিস্প্যানিক ও ক্যাথলিক ভোট
এক্সিট পোলের জরিপ অনুযায়ী ২০২০ সালের নির্বাচনের ফলাফল হিসেব করলে দেখা যায় ৩২ শতাংশ হিস্প্যানিক ভোটারা পোনাল ট্রাম্পকে সমর্থন দিয়েছিলেন। এবার কিন্তু ফলাফল পাল্টেছে। এবার সমর্থনের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৬ শতাংশ।
অন্যদিকে ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের মধ্যে ডোনাল ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা আগের তুলনায় বেড়েছে। সিএনএন বলছে, ২০২০ সালের নির্বাচনে ৪৭ শতাংশ ক্যাথলিক ভোটারের সমর্থন থাকলেও এবার সমর্থন দাঁড়িয়েছে ৫৮ শতাংশ।
নারীদের মাঝে জনপ্রিয়তা কমেনি ট্রাম্পের
নারীদের গর্ভপাতের অধিকার প্রশ্নে ডোনাল ট্রাম্পের নারীবিদ্বেষী মন্তব্যের কারণে ধরে নেয়া হয়েছিলো নারীদের মধ্যে তার জনপ্রিয়তা কমেছে। মানুষ মনে করতো কামালা হ্যারিস নারী বান্ধব হওয়ার কারণে ডেমোক্র্যাটরা নারী ভোটারদের কাছ থেকে বেশি সমর্থন আদায় করতে পারবেন।
কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। ২০২০ সালের নির্বাচনের তুলনা করলে এবারের নির্বাচনে বেশি সংখ্যক নারী ভোট পেয়েছেন পোনাল ট্রাম্প। ২০২০ নির্বাচনে যা ছিলো ৪২ শতাংশ তা এবার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫ শতাংশ।
যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম ভোট
প্যালেস্টাইন এবং ইসরাইল ইস্যুতে ইসরাইলের গণহত্যার প্রতি বরাবরই যুক্তরাষ্ট্র চুপ থেকেছে। ইসরাইলকে নানা ভাবে অর্থ সাহায্য এবং অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করছে এবং আমেরিকার প্রশ্রয়ে প্যালেস্টাইনে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে ইসরাইল। এই ইস্যুটিকে মুসলিম ভোটাররা ভালো ভাবে নেয়নি।
তাদের ধারণা ডোনাল ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হলে যুদ্ধনীতিতে পরিবর্তন আসবে যা ট্রাম্প নির্বাচনের আগে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কাজেই মধ্যপ্রাচ্য ইস্যুতে মুসলিম ভোটাররা ডেমোক্রেটদের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে এবং ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছে।
কামালা হ্যারিসের প্রতি আস্থার অভাব
আমেরিকান শ্বেতাঙ্গ নাগরিকদের মধ্যে ট্রাম্পের একটা শক্তিশালী সমর্থন বরাবরই ছিলো। তারা ব্যাপক হারে ট্রাম্পকে ভোট দেয়। এই শ্বেতাঙ্গ নাগরিকদের সমর্থনের কারণে ট্রাম্প কামালা হ্যারিসের চাইতে অনেকটাই এগিয়ে ছিলেন। দোদুল্যমান অঙ্গ রাজ্যগুলিতে বিজয়ী হতে শ্বেতাঙ্গ ভোটা এবং মুসলিম ভোট মিলে ট্রাম্পের জয় নিশ্চিত করেছে।
এদিক থেকে বলা যায় শ্বেতাঙ্গ নাগরিকেরা কামালা হ্যারিসের ওপর তারা পূর্ণ আস্থা রাখতে পারেনি। অপর দিকে কৃষ্ণাঙ্গ এবং ল্যাটিনো ভোটারদের সমর্থনের দিক থেকেও অনেকাংশে বেশ পিছিয়ে ছিলেন কামালা হ্যারিস। এবারের নির্বাচনে ডোনাল ট্রাম্প এই জনগোষ্ঠীর সমর্থন পেয়েছেন গত নির্বাচনের চাইতে বেশি।
আমেরিকান অভিবাসন নীতি
এবারের ২৪ এর নির্বাচনের প্রচারের সময় ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তিনি নির্বাচিত হলে অভিবাসন নীতিতে পরিবর্তন আনবেন। মনে করা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত অবৈধ ও কাগজপত্রহীন অভিবাসীরা ডোনাল ট্রাম্পের নিশানা হতে পারে। কাজেই তার প্রতিশ্রুত কর্মসূচি বাস্তবায়নের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতিতে আমূল পরিবর্তন আসবে বলে মনে করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, বৈধ কাগজপত্র নাই এমন অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্রে বাস করছে আনুমানিক ১ কোটি ১০ লাখ। অনেক নীতি নির্ধারক বলছেন, ডোনাল ট্রাম্পের এই কাজটি হবে অত্যন্ত বিতর্কিত এবং অমানবিক। এতে করে বহু ব্যক্তি, পরিবার এবং বিভিন্ন কমিউনিটি বিপর্যয়ে পড়তে পারে।
আরও পড়ুন : বিশ্বের প্রভাবশালী মুসলিমের তালিকায় ড. মুহাম্মদ ইউনূস