ছবি বিক্রি করে অনলাইনে ইনকাম

অনলাইনে ইনকাম করার উপায়
অনলাইনে ইনকাম করার উপায়

ফটোগ্রাফি অনেক সৃজনশীল মানুষের একটি নেশা। তবে কারো কারো জন্য এটি পেশাও বটে। আমাদের চারপাশের প্রকৃতি, নিত্যদিনের নানা অনুষজ্ঞ, জীবনযাত্রার অবতারণা থেকে শুরু করে নানা বিষয়ে আমরা শখ করে ছবি তুলে থাকি। কিন্তু এই শখের ছবিই টাকা ইনকামের পথ তৈরি করতে পারে, যার আমরা হয়তো অনেকেই জানি। কাজেই ছবি বিক্রি করে অনলাইনে ইনকাম এটি অসম্ভব নয় এবং তুলনামূলক সহজ পথ।

কিন্তু কিভাবে এবং কেমন করে কোথায় সেই ছবি বিক্রি করা যায়, তা আমরা অনেকেই খেয়াল করি না বা গুরুত্ব দিতে চাই না। আমরা যে যেই পেশাতেই নিয়োজিত থাকি না কেনো, এই শখের ছবিই একটি পেসিভ ইনকামের পথ তৈরি করে দিতে পারে যদি আমরা সেই ছবি বিক্রির ব্যবস্থা করি।

শুধু ছবি বিক্রি করে অনলাইনে ইনকাম নয়, ভিডিও ক্লিপ এবং কেউ গ্রাফিক্স ডিজাইনার হলে ভেক্টর আকারে সেসব গ্রাফিক্স ডিজাইনও একই সাথে বিক্রি করা যায়। আজকে আমরা জানার চেষ্টা করবো কিভাবে এবং কোথায় সেই ছবি বিক্রি করে টাকা আয় করা যায়।

ছবি বিক্রি করার নিজস্ব ওয়েবসাইট

আমরা আমাদের শখের ছবিগুলো একটি নিজস্ব ওয়েবসাইট তৈরি করে সেখানে আপলোড করে বিক্রির ব্যবস্থা করতে পারি। তবে এখানে কিছুটা ওয়েবসাইটের টেকনিক এবং পরিচালনা করার মতো ন্যূনতম জ্ঞান থাকতে হবে। তাছাড়া ছবিগুলি প্রয়োজনীয় সম্পাদনা শেষ করে আকর্ষণীয় ছবিগুলি কেটাগরিকেলি সাজিয়ে ডিসপ্লে করতে পারি। নিজস্ব ওয়েবসাইটে ছবি বিক্রি করে অনলাইনে ইনকাম কিছুটা জটিল হলেও নিরাপদ। কারণ সামান্য এদিক সেদিক হলেই ওয়েবসাইটগুলো একাউন্ট বাতিল করে দেয়।

এই ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে প্রয়োজনীয় মার্কেটিং এবং পেমেন্ট গেটওয়ে সেট করতে কিছুটা ঝামেলা এবং বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে। ডোমেইন-হোস্টিং থেকে শুরু করে মার্কেটিং পর্যন্ত পুরো বিষয়টি নিজেই দেখতে হবে এবং ছবি বিক্রি হলে পুরোটাই নিজের। এখানে কাউকে কোন কমিশন দিতে হবে না। ছবি যদি কম বিক্রিও হয়, সেক্ষেত্রেও পুষিয়ে যাবে, কারণ টাকার কোন ভ্যাট-টেক্স নেই।

ছবি বিক্রি করার ওয়েবসাইট :
শাটারস্টক

অনলাইন দুনিয়ায় ছবি বিক্রির সবচেয়ে বড় সাইট শাটারস্টক। এখানে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ছবির মওজুদ আছে। এখানে রেজিস্ট্রেশন করে আপনি প্রতিদিন ছবি জমা দিতে পারেন। শাটারস্টকে একেবারে লো-কোয়ালিটির ছবি না হলে প্রায় সব ছবিই এপ্রুভ হয়ে যায়। এখানে ৩০০০ থেকে সর্বোচ্চ ৮০০০ পিক্সেলের ছবি জমা দিতে হয় এবং একদিনের মধ্যেই ছবি যাচাই বাছাই করে এপ্রুভালে দিয়ে দেয়। এখানে শুধু ছবি নয়, গ্রাফিক্স ডিজাইন এবং ছোট ছোট ভিডিও ক্লিপও বিক্রি করা যায়।

১৮ বছরের উর্ধ্বে যে কেউ এখানে একাউন্ট করতে পারে। এখানে ছবি বিক্রির সংখ্যার ওপর নির্ভর করে ১৫% থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৪০% পর্যন্ত কমিশন পাওয়া যায়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ছবিটি জমা দেয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে যে, ছবিটি উচ্চ মূল্যে বিক্রি হবে বিধায় ছবির যথেষ্ট সেলভেলু থাকার মতো কোয়ালিটি ছবি হওয়া জরুরী। ছবি সাধারণত জেপিইজি ফরমেটে জমা দিতে হয়।

শাটারস্টক থেকে পেমেন্ট পেতে পেপাল হলে ন্যূনতম ২৫ ডলার জমা হলেই অটোমেটিক পেমেন্ট করে দেয়। যদি কারো পেপাল না থাকে, মানে আমাদের বাংলাদেশ থেকে যেহেতু পেপাল নেই, সেই ক্ষেত্রে লোকাল একাউন্টেও টাকা ট্রান্সফার করা যায়। সেই ক্ষেত্রে জমা টাকার পরিমাণ বেশি হতে হয়।

শাটারস্টকসহ সবগুলি ওয়েসবাইটের একটা কম বিষয় হলো এখানে অন্যের ছবি কপি-পেষ্ট করে অথবা কারো ছবি চুরি করে জমা দেয়া যাবে না। সেটি হয়তো প্রথমে এপ্রুভ হবে কিন্তু যখন অন্য আরেকটি টিম কপিরাইট যাচাই করবে, সেখানে ধরা পড়লে পেমেন্টসহ সাথে সাথে একাউন্ট বন্ধ করে দেবে।

অ্যাডোবি স্টক

পৃথিবীর বিখ্যাত সফটওয়্যার কোম্পানি অ্যাডোবির উচ্চ মানের ছবি এবং গ্রাফিক পরিষেবা হলো অ্যাডোবি স্টক। তবে অ্যাডোবি স্টক সাইটে পেওনিয়ার সাপোর্ট করার কারণে যে কোন ১৮ বছরের বাংলাদেশি নাগরিক সহজেই এই সাইটে ছবি জমা দিতে পারেন। অ্যাডোবি স্টকেও শাটারস্টকের মতো আকর্ষণীয় ছবি বা গ্রাফিক্স হলে সহজেই এপ্রুভ হয়ে যায়। তবে এপ্রুভ হতে সময় একটু বেশি লাগে এমনি কি কয়েক দিনও লেগে যেতে পারে।

ওয়েবসাইটের কন্ট্রিবিউটর পাতায় গিয়ে জয়েন নাউ ক্লিক করে খুব সহজেই একটি আইডি খুলে নিতে পারেন। নিবন্ধনের সময় অন্যান্য সঠিক তথ্যগুলোর সঙ্গে জরুরি ভিত্তিতে ডব্লিউ-৮বিইএন ট্যাক্স ফর্মটিও পূরণ করে দিতে হয়।

অ্যাডোবি স্টকে কমিশনের পরিমাণ অন্যান্য অনেক সাইটের চাইতে বেশি। এখানে ৩৩% রয়্যালিটি পাওয়া যায়। তাদের পেমেন্ট সিস্টেমও ভালো। ২৫ ডলার হলেই পেমেন্ট পাওয়া যায়। এখানে ছবি ছাড়াও গ্রাফিক্স ডিজাইন এবং ভিডিও ক্লিপ বিক্রি করা যায়।

এলামি

Alamy.com সাইটটি বিচিত্র ও ক্রিয়েটিভ ছবির জন্য সবার কাছে পরিচিত। এই ওয়েবসাইটের ছবি যথেষ্ট ভালো মানের এবং ইউনিক ছবি হয়ে থাকে। তাই আপনার ছবিগুলো যদি খুবই ইউনিক হয়ে থাকে, তাহলে এলামি সাইট থেকে আপনি ভালো মানের একটা ইনকাম জেনারেট করতে পারেন। এখানে এক্সক্লুসিভ এবংনন-এক্সক্লুসিভ দুই ধরণের একাউন্ট খোলা যায়।

এক্সক্লুসিভ হলো এই সাইটে জমা দেয়া ছবিটি আপনি আর কোন সাইটে বিক্রির জন্য জমা দিতে পারবেন না। এই ক্ষেত্রে আপনি ৫০% পর্যন্ত কমিশন পাবেন। আর নন-এক্সক্লুসিভ একাউন্ট হলো একই ছবি বিভিন্ন একাউন্টে জমা দিতে পারবেন। এই ক্ষেত্রে আপনি সর্বোচ্চ ৪০% পর্যন্ত কমিশন পাবেন। এখানে ইউনিক ছবি হলে সহজেই এপ্রুভ হয়ে যায়।

গেটি ইমেজেস ও আইস্টক

গ্রাফিক কন্টেন্ট এবং স্টক ফটো সম্পর্কিত সাইট দুইটি একই কোম্পানির মাধ্যমে পরিচালিত এবং নিয়ম কানুন প্রায় একই। এই সাইটে নিবন্ধন করতে হলে অ্যাপ স্টোর বা গুগল প্লে থেকে এদের স্ব স্ব নামের অ্যাপটি ডাউনলোড করতে হয়। তাদের নির্ধারিত অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধনের সময় কন্ট্রিবিউটর হিসেবে আবেদনকারীর বয়স কমপক্ষে ১৮ বছর হতে হয়। সাইন-আপের সময় তিন থেকে ছয়টি নমুনা ছবি জমা দিতে হয়। এগুলো এপ্রুভ হয়ে গেলে পরে এক সাথে অনেক ছবি জমা দেয়া যায়।

এখানেও এক্সক্লুসিভ এবং নন-এক্সক্লুসিভ দুই ধরণের একাউন্ট খোলা যায়। তবে নন-এক্সক্লুসিভের ক্ষেত্রে কমিশন বাড়া বা কমার কোন সুযোগ নেই। তারা ১৫% রয়্যালিটি দিয়ে থাকে এবং গেটি ইমেজের ক্ষেত্রে ২০% দেয়। এখান থেকে লোকাল একাউন্টেও পেমেন্ট ট্রান্সফার করা যায়। তবে এই সাইটে কখনো কখনো ছবি উচ্চ মূলেও বিক্রি হয় বিধায় কোন কোন ছবির উচ্চ মূল্য পাওয়া যায়।

এক মাসে বিক্রির হিসেব পরবর্তী মাসের ১৬ থেকে ২০ তারিখের মধ্যে আইডিতে জমা করে দেয় এবং মিনিমাম এমাউন্ট ১০০ ডলার হলে প্রয়োজনীয় টেক্স কেটে ২৫ তারিখের মধ্যে পেমেন্ট দিয়ে দেয়।

ফ্রীপিক

আপনি আপনার ছবি এবং গ্রাফিক্স ডিজাইন খুব সহজেই ফ্রীপিকে বিক্রির জন্য আইডি খুলে জমা দিতে পারেন। প্রায় সবগুলি সাইটের মতো এখানেও এনআইড কার্ড জমা দিতে হয় সাধারণত বয়স ভেরিফিকেশনের জন্য। এখানে আইডি খোলা অন্যান্য সাইটের মতোই সহজ এবং ছবি এপ্রুভ হয় সহজেই। তবে ছবি এপ্রুভ হতে বেশ সময় লাগে, এমনকি কয়েকদিন পর্যন্ত লেগে যায়।

ফ্রীপিকে প্রচুর ছবি বিক্রি হয় কিন্তু কমিশন পাওয়া যায় খুবই কম। ছবি যেহেতু বিক্রি বেশি হয় সেই ক্ষেত্রে কমিশন কম হলেও পুষিয়ে যায়। এখানে মিনিমাম ৫০ ডলার হলে পেমেন্ট পাওয়া যায় এবং ২৪% ট্যাক্স কেটে নেয়। ফ্রীপিকে ছবির চাইতে গ্রাফিক্স ডিজাইন বিক্রি হয় বেশি।

স্টকসি

স্টকসির প্ল্যাটফর্মে ছবি বিক্রির জন্য সকল সঠিক তথ্য দিয়ে প্রথমে আবেদন করতে হয়। এখানে ব্যক্তিগত তথ্য প্রদানপূর্বক নিজের পোর্টফোলিও শেয়ার করতে হয়। ইমেইলের মাধ্যমে এর ইতিবাচক উত্তর পেলে প্রথমে ১০টি ছবি আপলোড করতে হয় নমুনা হিসেবে। সেই ছবিগুলো যাচাই করে পর্যবেক্ষক টিম অনুমোদন করলেই কেবল এখানে কন্ট্রিবিউটর হওয়া যাবে। স্টকসির বিক্রির ওযর সাধারণত ৫০% পর্যন্ত কমিশন দিয়ে থাকে। বাংলাদেশিরা পেওনিয়ার কার্ডের মাধ্যমে এখান থেকে পেমেন্ট নিতে পারবেন।

ড্রিমসটাইম

ড্রিমসটাইমে নিবন্ধন করা সহজ। প্রথমে নাম এবং ইমেইল এড্রেস দিয়ে আইডি খুলে নিজস্ব কয়েকটি নমুনা ছবি জমা দেয়া যায়। তবে ড্রিমসটাইমে ছবি এপ্রুভ করানো বেশ কঠিন। এখানে সহজে ছবি এপ্রুভ হতে চায় না। খুবই ইউনিক এবং আকর্ষণীয় ছবি না হলে এখানে এপ্রুভ হয় না। এখানে একজন নন-এক্সক্লুসিভ কন্ট্রিবিউটর ২৫% কমিশন পেয়ে থাকেন। এদের ছবির মূল্য বেশ বেশি, তাই ছবির ভালো দাম পাওয়া যায়।

তবে ড্রিম্সটাইমে এক্সক্লুসিভ স্তরের স্টক ফটোগ্রাফারদের রয়্যাল আসে সর্বোচ্চ ৬০% পর্যন্ত। আর আগেই বলেছি নন-এক্সক্লুসিভ কন্ট্রিবিউটর হতে হলে অন্য কোথাও একাউন্ট থাকতে পারবে না এবং থাকলে সেটি কপিরাইট হিসেবে গণ্য হবে এবং একাউন্ট বন্ধ করে দেবে।

১২৩ আরএফ

এখানেও অন্যান্য সাইটের মতোই তাদের ওয়েবসাইটে গিয়ে নাম ও ইমেইল সহ যাবতীয় তথ্য দিতে হয়। এখানেও সব জায়গার মতো তথ্যগুলোর জন্য বৈধ নথি জমা গিতে হয়। তারা দক্ষতা যাচাইয়ের জন্য নিজস্ব ১০টি ছবি জমা নেয়। এগুলো অনুমোদিত হলে পরবর্তীতে নিয়মিত ভাবে ছবি আপলোড করা যায়। এখানে শাটারস্টেকের মতো কন্ট্রিবিউটর স্তরের উপর নির্ভর করে করে ৩০% থেকে সর্বোচ্চ ৬০% পর্যন্ত রয়্যালটি পাওয়া যায়।

ডিপোজিট ফটোস

১৮ বছর বয়সী যে কেউ ব্যক্তিগত তথ্য ও ইমেইল ঠিকানা দিয়ে একটি অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন। নিবন্ধনকালে কয়েকটি নমুনা ছবি জমা দিতে হয়। এপ্রুভ হলে তারা ইমেইলের মধ্যেমে জানিয়ে দেয় এবং তাদের সাইটে অন্যান্য সাইটের মতো ছবি বিক্রির জন্য প্রদর্শিত হয়।

এখানে অন্যান্য সাইটের মতো সাবসক্রিপশন এবং সিঙ্গেল দুই ভাবেই ছবি বিক্রির ব্যবস্থা রয়েছে। সেই ক্ষেত্রে রয়্যালিটি কম বেশি হতে পারে। বাংলাদেশি যে কোন কন্টিবিউটর পেওনিয়ার ব্যবহার করে টাকা উত্তোলন করতে পারবেন।

তাছাড়াও স্টকসি, ক্যান স্টক ফটো, ফটোডান, ফোপ, জেন ফোলিও, পিক্সিসেট, ডিপোজিট ফটোস, আইইএম নামে আরও কয়েকটি সাইট রয়েছে। প্রায় সবগুলি সাইটের আইন ও নিয়ম কানুন প্রায় একই।

পূর্বেই বলেছি ছবি বিক্রি করে অনলাইনে ইনকাম বিষয়টি নিশ্চিত করতে হলে সবগুলি ওয়েসবাইটের একটা কম বিষয় হলো এখানে অন্যের ছবি কপি-পেষ্ট করে অথবা কারো ছবি চুরি করে জমা দেয়া যাবে না। সেটি হয়তো প্রথমে এপ্রুভ হবে কিন্তু যখন অন্য আরেকটি টিম কপিরাইট যাচাই করবে, সেখানে ধরা পড়লে পেমেন্টসহ সাথে সাথে একাউন্ট বন্ধ করে দেবে।

আরও পড়ুন : কিভাবে অনলাইন থেকে ইনকাম করা যায়-ফ্রি টাকা ইনকাম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *