সরকারি চাকরির বয়স সীমা কত
বর্তমানে বাংলাদেশের সবগুলি সরকারি সেক্টরের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বয়সসীমা ৩০ বছর। তবে সরকারি চাকরির বিভিন্ন সেক্টরে নিয়োগ পেতে হলে বয়স কত হওয়া উচিত এই নিয়ে বহু আগে থেকেই নানা মহলে আলোচনা-পর্যালোচনা চলছে। ১৯৯১ সালে সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ২৭ বছর থেকে বাড়িয়ে ৩০ বছর করা হয়েছিলো কিন্তু অবসর গ্রহণের সময় আগের মতোই ৫৭ বছর ছিলো।
পরে ২০১১ সালে এসে চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের বয়স ৫৭ থেকে বাড়িয়ে ৫৯ করা হয়েছিলো। যেখানে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ২০১১ সালে ছিল ৭০ বছর, সেখান থেকে বেড়ে বর্তমান গড় আয়ু ৭৪ বছরের কাছাকাছি এসেছে। সেই হিসেবে অনেকে অবসরের সময়সীমাও বাড়ানোর পক্ষে যুক্তি দিচ্ছেন অনেকে।
বয়সসীমা বৃদ্ধির পক্ষে যুক্তি
সরকারি চাকরির বয়স সীমা কত হওয়া যৌক্তিক। চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে সাধারণত যাদের বয়স একটু বেশি, তারাই বিভিন্ন সময়ে আবেদনের বয়সসীমা বাড়ানোর আন্দোলন বা দাবি-দাওয়া করে আসছেন বহু আগে থেকেই। প্রায় দুই দশক যাবত এ ধরণের আন্দোলনের খবর নিয়মিতভাবে সংবাদমাধ্যমে আসতে দেখা যায়। আন্দোলনকারীদের একটি শক্ত যুক্তি হলো, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ বছর থেকে ৫৯ বছর পর্যন্ত হতে দেখা যায়।
এই যুক্তিতে বাংলাদেশের শিক্ষিত বেকারেরা কেন এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন? এই যুক্তির পক্ষে যারা মত দিচ্ছেন, তাদের মতে বয়স নয়, যোগ্যতাই হতে পারে একজন প্রার্থী বাছাইয়ের প্রধান বিবেচ্য বিষয়। তা ছাড়া মানুষের গড় আয়ু বেড়ে যাওয়ার বিষয়টিও তারা বিভিন্ন সময় উল্লেখ করছেন।
বয়স সীমা ৩৫
বিভিন্ন মহল থেকে চাকরির বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে সুপারিশ রয়েছে। কিছুদিন আগে শিক্ষামন্ত্রীর তরফ থেকে বয়সসীমা ৩৫ বছর করার জন্য একটি সুপারিশ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি আকারে জমা দেয়া হয়েছে। এই চিঠির ইস্যুটিকে সূত্র ধরে অনেকে পক্ষে-বিপক্ষে মত প্রকাশ করে চলেছেন এবং সপক্ষে অনেকেই শক্ত যুক্তি উপস্থাপন করছেন।
জন্মহার সফলভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারা এবং আয়ু বৃদ্ধির পাবার ফলে বাংলাদেশে বয়সের গড় বেড়েছে। বাংলাদেশের বৃহৎ তরুণ-তরুণীর বিশাল এক জনগোষ্ঠীকে কাজে লাগাতে না পারলে দেশের অর্থনীতিকে দ্রুত এগিয়ে নেওয়া একেবারেই অসম্ভব। তাছাড়া তরুণ-তরুণীদের শুধুমাত্র নিয়োগ পরীক্ষার মধ্যেই ব্যস্ত রাখা হলে এই সুযোগ কোন ভাবেই কাজে লাগানো আদৌ সম্ভব হবে না।
তাছাড়া একজন শিক্ষার্থীকে একাডেমিক লেখাপড়া শেষ করে অনেকে চাকরির প্রস্তুতিমূলক বিভিন্ন কোর্সে অংশগ্রহণ করে থাকেন এবং কেউ কেউ গবেষণামূলক কোন কাজেও অশংগ্রহণ করে থাকেন। সেই সুবাদে লেখাপড়ার পেছনে অনেক সময় ব্যয় করতে হয় বিধায় বয়স বেড়ে যায়।
রাষ্ট্র যদি বাস্তবতাকে আমলে নিয়ে সব দিক বিবেচনা করে বয়সসীমা বৃদ্ধি করে, তাহলে একজন অভিজ্ঞ ও যোগ্য একাডেমিশিয়ানকে নিয়োগ দিতে পারেন। এই যুক্তিতে কেবল বয়স কম হলেই একজন লোক রাষ্ট্রের প্রতি অবদান রাখতে পারবেন এমন নয়, বরং অভিজ্ঞতা ও একাডেমিক জ্ঞানের প্রতিই বেশি গুরুত্বারোপ করা উচিত।
চাকরি বয়সসীমা না থাকলে কী সমস্যা
বর্তমান সীমা অনুযায়ী যেসব চাকরি প্রার্থীর বয়স প্রায় ৩০ ছুঁই ছুঁই, তারা বর্তমানে যদি চাকরির জন্য লড়ে থাকেন, যদি বয়স বাড়ানো হয় সেক্ষেত্রে হয়তো এর চাইতে দ্বিগুণ প্রার্থীর সাথে লড়তে হতে পারে। এমন পরিস্থিতেতে হয়তো পিএসসি নতুন কৌশল গ্রহণ করবেন।
কারণ হতে পারে বিপুলসংখ্যক প্রতিযোগীর জন্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করা এবং খাতা দেখার প্রক্রিয়া নিশ্চয় আগের মতো করতে পারবে না। এখন পরীক্ষার জন্য যতটা সময় ব্যয় হয়, তখন তার দ্বিগুণ সময় ব্যয় করতে হবে। আর চাকরিতে পদধারীর সংখ্যা যদি একই থাকে তাহলে একজন প্রার্থীর চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা ৫০ ভাগ কমে যাবে সাভাবিকভাবেই।
বরং এর বিকল্প হতে পারে শিক্ষাজীনে ন্যূনতম সেশন জট না থাকা, প্রতিবছর নিয়মিত বিসিএস অনুষ্ঠিত হওয়া এবং নিয়োগ নিশ্চিত করা। বর্তমানে বিসিএস এর নিয়োগগুলি পরীক্ষা এবং বিভিন্ন পর্যালোচনা করতে তিন বা চার বছর লেগে যায়। এটিকে কমিয়ে আনতে পারলে এবং নিয়মিত হলে একজন শিক্ষার্থী কমপক্ষে ৫ থেকে ৭ বার বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন এবং সেখানে তার কর্মসংস্থান হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। এতেও যদি চাকরি না হয়, তাহলে সে বিকল্প ব্যবস্থায় কোন কর্মসংস্থান তৈরি করতে মনোনিবেশ করবেন।
বয়সসীমা নয় দক্ষতা জরুরী
বাংলাদেশে তরুণ-তরুণীদের চাকরির ক্ষেত্রে দক্ষতা একটি বড় বিষয়। একজন একাডেমিশিয়ানকে যতটা দক্ষতার সহিত একটি কাজ সম্পাদন করতে হয়, ছাত্রজীবনে সেই দক্ষতা অনেকাংশেই অর্জিত হয় না। এর জন্য একাডেমিক পড়ালেখার পাশাপাশি দক্ষতা অর্জন করার মতো পর্যাপ্ত সুযোগ আমাদের দেশে নেই। বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি নিয়োগের ক্ষেত্রে তরুণদের দক্ষ ও যোগ্য করে তোলার জন্য দেশ-বিদেশে বাজারের চাহিদার দিকে নজর রেখে নানা ধরনের প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেয়া খুবই জরুরী বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।